“কার্টুন পিপল” নিয়ে এলো “দেশী ক্যারেক্টার ডিজাইন চ্যালেঞ্জ”- আঁকবে তুমি, দেখবে দেশ!

এই লেখাটি লেখার সময় তথ্যসূত্র হিসেবে ইংরেজি আর্টিক্যাল থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। সেই লেখার লেখিকা ও সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মূল লেখার লিংকঃ
https://medium.com/@cartoonpeople/deshi-character-design-challenge-dcdc-aaaef1ff5753

বাংলাদেশে কার্টুনের ক্ষেত্রে কোন ক্যারেক্টারটি আমাদের ছেলেবেলায় মনে গেঁথে ছিল? এক বাক্যে প্রায় সবাইই বলবে “মীনা”। অন্তত ৯০ এর দশকে যারা শিশু-কিশোর ছিল তারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবে মীনা, টম এন্ড জেরি কিংবা ক্যাপটেন প্ল্যানেট কার্টুনগুলো দেখার জন্য সবাই কী রকম পাগল ছিল! ঠিক এখন যেমন আমরা ডোরেমন, উগি, ডেক্সটার’স ল্যাব, সামুরাই জ্যাক, ইয়াং জাস্টিস দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি।

এ কার্টুনগুলো জনপ্রিয় হয় কিন্তু এতে উপস্থিত ক্যারেক্টারগুলোর কারণে। ক্যারেক্টারের শক্তিশালী উপস্থিতিই নির্ধারণ করে একটি কার্টুন দর্শকের মনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে। তাই অনেক কার্টুন সিরিজ অনেক দিন ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকে, অনেকে হয়তো হারিয়ে যায়।

এই যে আমরা এতগুলো ক্যারেক্টার বা চরিত্রের নাম জানি, এগুলোর কোনোটি ছিল কমিক বইতে, কোনোটি কার্টুনে, আবার কোনোটি ছিল এনিমেশন মুভিতে। এই প্রতিটা ক্যারেক্টারের কিন্তু বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যাতে তারা হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। যেমন- টম এন্ড জেরিতে এদের ২ জনেরই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল।আর ঠিক এই জায়গা থেকেই শুরু হয় “ক্যারেক্টার ডিজাইন” বা একটা চরিত্রকে আঁকার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার কাজটি।

এখানে একটা “কিন্তু” আছে। সেটা কি? ক্যারেক্টার ডিজাইন বলতে শুধু ক্যারেক্টারটি আঁকার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা বোঝায় না; এর সাথে আরো যুক্ত আছে যে দেশ/জায়গার প্রেক্ষাপটে ক্যারেক্টারটি আমরা আঁকছি, সেই দেশ/স্থানের সংস্কৃতি ও ভাষা সংক্রান্ত সঠিক ধারণা। যেমন- হলিউডের সুপারহিরোরা যে গেট-আপ বা লুক নিয়ে তাদের ক্যারিশমা দেখায়, ঠিক একই গেট আপ ও লুক নিয়ে তাদের ঢাকার রাস্তায় নামিয়ে দিলে সেটা মানাবে না। কেন? ঐ যে! কালচার বা সাংস্কৃতিক ভিন্নতা। আর এইজন্য আমাদের চাই দেশী সুপারহিরো কিংবা ক্যারেক্টার, আমাদের নিজেদের। অর্থাৎ ক্যারেক্টার ডিজাইন করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে কাদের জন্য আমি আঁকছি, আমার দর্শক, পাঠক বা টার্গেট অডিয়েন্স কারা।তারা যেন আমার আঁকা ক্যারেক্টারটিকে সাথে নিজেদেরকে “relate” করতে পারে। এরকম একটা কার্টুন হচ্ছে- “মীনা”। মীনা, রাজু, মিঠু, দুষ্টু দোকানদার, মুরগী চোর, স্কুলের আপা, বাবা-মা, দাদী-এরা সবাই কিন্তু আমাদের নিজেদের সাথে মানিয়ে যায় এরকম চরিত্র বা ক্যারেক্টার।একদম দেশী। আর তাই মীনা কার্টুনটি হয়েছে অনেক জনপ্রিয়।

দিনশেষে এভাবেই কার্টুন বা এনিমেশন মুভির কাল্পনিক চরিত্রগুলো হয়ে উঠে আমাদের জীবনেরই অংশ। স্কেচবুকের স্থির ড্রয়িংগুলো এনিমেশনের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে উঠে।গল্পের প্লট আর অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলোর নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় আমাদের সেই নির্দিষ্ট ক্যারেক্টার হয়ে উঠে বাস্তব ও প্রাণবন্ত।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনাময় কার্টুনিস্ট আছেন, যারা বেশ দারুণ ক্যারেক্টার ডিজাইন ও ইলাস্ট্রেট করেন। কিন্তু তাদের ক্যারেক্টার ডিজাইনে বিদেশী একটা ছাপ রয়েই যায়- ওয়েস্টার্ন কিংবা জাপানিজ ম্যাংগা স্টাইল। এটার জন্য অবশ্য তাদের দোষ দেয়া যায় না। কারণ, ক্যারেক্টার ডিজাইনের জন্য তারা মূলত ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন সাহায্য নেন রেফারেন্স হিসেবে। আর ইন্টারনেটে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ভাষার সাথে মেলে এরকম ড্রয়িং রেফারেন্স নেই বললেই চলে। যেকারণে একটা ব্যপার ঘটে- দেশী ক্যারেক্টার আঁকলেও সেটা মনের অজান্তেই দেখতে বিদেশী ড্রয়িং হয়ে যায়।

এছাড়া বিদেশী কার্টুনের ক্যারেক্টারকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে আঁকতে আঁকতে আমরা নিজেদের চারপাশেই আঁকা-আঁকির কত-শত উপকরণ ছড়িয়ে আছে, তা ভুলে যাই। ফলে আমাদের একদম নিজেদের কোনো দেশীয় ক্যারেক্টার তৈরি হয় নি।

আর এই শুন্যতাটুকু পূরণ করতে ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে “কার্টুন পিপল” শুরু করেছে ডিসিডিসি- দেশী ক্যারেক্টার ডিজাইন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মূল থিম হচ্ছে দেশী ক্যারেক্টার ডিজাইন আর সেই ক্যারেক্টার ভিত্তিক দেশী গল্প বা স্টোরি তৈরি করা। এছাড়া প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া এই দেশী ক্যারেক্টার ডিজাইন চ্যালেঞ্জের আরেকটা লক্ষ্য হচ্ছে, আর্টিস্টদের সামনে একটি দেশী ক্যারেক্টারের রেফরেন্স আইডিয়া ও হিন্টস দেয়া, যেটার উপর ভিত্তি করে দেশীয় আর্টিস্টরা আরো মৌলিক ও দেশীয় ক্যারেক্টার ডিজাইন করতে পারবেন, একদম নিজের মতো করে।

ডিসিডিসি-১- টং ম্যান দ্য সুপারহিরো

ডিসিডিসি’র ১ম চ্যালেঞ্জটি ছিল “টং ম্যান” চ্যালেঞ্জ। টং দোকানের চা-নাশতার সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। তো এই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক থিম ছিল, এরকম একটা সুপারহিরো ক্যারেক্টার ডিজাইন করা, যার আগমণ ঘটবে টং দোকান থেকে! দারুণ না? প্রথম চ্যালেঞ্জেই যথেষ্ঠ সাড়া পড়ে এবং মোট ৪৩ টি ডিজাইন জমা পড়ে। বিজয়ী হন- মাহতাব রশীদ, মোরশেদ মিশু ও জুনায়েদ ইকবাল ইশমাম।

ডিসিডিসি-২- হেই মামা

“মামা” বলতে আগে বোঝাতো শুধু মায়ের ভাই। আর এখন প্রায় সবাই মামা!আমার আম্মু তো আগে খেপেই যেত, সবাই মামা? এ কেমন কথা!রিকশাওলা থেকে হালিম বিক্রেতা-মামার তালিকায় আছেন সবাই! আর এই হরেক রকমের মামাদের নিয়েই ডিসিডিসি’র এবারের চ্যালেঞ্জের নাম ছিল “হেই মামা।” কার্টুন পিপল-এর কাছে এবার ১০০র চেয়েও বেশি ডিজাইন জমা পড়ে। এটা থেকেই বোঝা যায়, দেশী ক্যারেক্টারের জন্য সবাই কতটা আগ্রহী ছিল। বিজয়ী হন- আরহাম হাবিব, সমীত আহমেদ, আদিব রেজা রঞ্জন এবং অঙ্গনা আহসানা।

ডিসিডিসি-৩- এলাকার পোলাঃ দ্য থাগ লাইফ

এলাকার “ভাই”দের নিয়ে ছিল এই চ্যালেঞ্জ।এবারো মিললো বিপুল সাড়া। বিজয়ী হন- মোরশেদ মিশু, রাফিদ নাহিয়ান, সমীত আহমেদ ও অন্তিক মাহমুদ অনিক।

ডিসিডিসি-৪

এবার ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। ছোটবেলায় পড়া সেই রূপকথার গল্প আর ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র চরিত্রগুলোর কথা মনে আছে তো? চাঁদের বুড়ি থেকে ডালিম কুমার, রাক্ষস-খোক্কস থেকে নীল কমল ও লাল কমল-আমাদের প্রিয় আঁকিয়েরা এঁকেছে সবাইকে, হ্যাঁ… সব্বাইকে! বিজয়ী হন এবার- রিও ষুভ, তাপসী মৌমিতা ও আদ্রিয়ান অনিক।

ডিসিডিসি-৫- মুক্তিযোদ্ধা চ্যালেঞ্জ

রূপকথার পর এবারের চ্যালেঞ্জ ছিল ইতিহাস নিয়ে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদের নিয়ে। ২০১৭ সালে, বিজয়ের মাসে দেশের সবাইকে একই জায়গায় নিয়ে আসার প্রত্যয় নিয়ে এবারের চ্যালেঞ্জটি শেষ হয়। আর এবারের চ্যালেঞ্জের ড্রয়িং এ ধরা পড়েছে এসময়ের তরুণ আর্টিস্টদের চোখে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবিম্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *